নির্বাচনের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রাচীন গ্রীস, প্রাচীন রোমের পর মধ্যযুগেও শাসক ঠিক করার জন্য নির্বাচন পদ্ধতির ব্যবহার করা হতো। রোমান সম্রাট থেকে শুরু করে পোপ পর্যন্ত নির্বাচন বা ভোটাভুটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতেন। বর্তমানে আমরা নির্বাচন বলতে যা বুঝি বা যেভাবে সরকার প্রতিনিধি বা আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হন এই ব্যবস্থার সূচনা হয় ১৭ শতকের প্রাক্কালে। সে সময় প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ধারণার প্রথম বাস্তবায়ন হয় উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে। নির্বাচনের সঙ্গে ভোট প্রদান অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। নির্বাচনের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল ভোটাধিকার। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও দেখা গেছে ভোট প্রদানের বিষয়ে পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রথমদিককার ভোটগুলোতে জমিদার ও শাসক শ্রেণির মানুষদের প্রাধান্য দেখা গেছে। যাই হউক, ১৯২০ সাল নাগাদ পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান না থাকা সব দেশগুলোতে পূর্ণবয়স্ক সব নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। ওই সময় কিছু দেশ নারীদের ভোটাধিকার প্রদানেও এগিয়ে আসতে দেখা যায়। ভোট, ভোটার এবং প্রার্থীদের সমন্বয়ে গড়া প্রাচীনতম কয়েকটি নির্বাচনের ইতিহাস সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জানা যাক।
খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে গ্রীক নগরী পলিস (আজকের এথেনস) এ বিশ্বে প্রথমবারের মতো গণতন্ত্রের সূচনা হয়, যা ‘এথেনিয়ান ডেমোক্রেসি’ নামে পরিচিত। পরে গ্রীসের অন্যান্য নগরীতেও এথেনিয়ান মডেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করতে দেখা যায়। তবে সেসবের নথি ভালভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি যেমনটা করা হয়েছে এথেনসের ক্ষেত্রে। এথেনসের ‘ডাইরেক্ট ডেমোক্রেসি’বা ‘সরাসরি গণতন্ত্র’যেখানে অংশগ্রহণকারী নাগরিকরা আইন বা নির্বাহী বিলে সরাসরি ভোট দিতে পারতেন।
যদিও সেসব নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। ভোটাধিকার সংরক্ষিত ছিল ভিনদেশী, দাস ও নারী ব্যতীত অন্যান্য প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের জন্য। এথেনিয়ান গণতন্ত্রে যাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিলো তাদের অন্যতম হলেন, সোলন (৫৯৪ খ্রি.পূ.), ক্লেইসথেনেস (৫০৮ খ্রি.পূ.) এবং ইপহিয়ালটেস (৪৬২ খ্রি.পূ.)।
রোমান সম্রাটরা তাদের অগণতান্ত্রিক ঐহিত্যের জন্য পরিচিত। তবে রোমান রিপাবলিক যুগে রোমানরা প্রথমবার ভোট প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে। ৫০৯ খ্রিষ্টপূর্বে রোমানরা তাদের ‘ইটরুসকান’ শাসক উৎখাতের মাধ্যমে ‘রোমান রিপাবলিক’ যুগের সূচনা করে। তখনকার সময়ের ভোটের গুরুত্ব অবশ্য আধুনিক সময়ের ভোটের মতো ছিল না। তবে আজকের দিনের ভোট প্রক্রিয়ায় রিপাবলিক যুগের প্রভাব লক্ষনীয়। রোমান রিপাবলিক প্রাচীন রোম শাসন করেছে ৫০০ বছর।
এটি ছিল এমন এক ধরনের সরকার যেখানে জনগণ সরকারি কর্মকর্তাদের নির্বাচিত করতে পারতেন। জটিল এই সরকারের সঙ্গে ছিল একটি সংবিধান যেখানে প্রতিটি বিষয়ে বিস্তারিত আইন ছিলো। ভোটে নির্বাচিতদের অন্যতম ছিল সিনেটর। এছাড়া রোমান রিপাবলিকে সরকার পরিচালনায় সাহায্য করার জন্য আরো অনেক নেতা ও গ্রুপ ছিল। নির্বাচিত কর্মকর্তাদের বলা হতো ম্যাজিস্টেট।
শুরুতে মাত্র দুজন কনসাল ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও রিপাবলিকের শেষ দিকে এ সংখ্যা ৪৪ এ পৌঁছায়। নির্বাচনে ভোট দিতে পারতেন শুধুমাত্র রোমান পুরুষরা। আর নারী, দাস এবং যারা রোমে জন্মগ্রহণ করেনি তাদের ভোটাধিকার ছিল না। শুরুতে ভোটাধিকার সীমিত সংখ্যায় হলেও ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন এক সময় রোমান সাম্রাজ্যে ভোটারের সংখ্যা ৯ লক্ষ ১০ হাজারে ছাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
অন্যদিকে ভারতীয় উপমহাদেশেও নির্বাচনের ইতিহাস বেশ পুরনো। বৈদিক (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব) যুগে ভারতীয় মহাদেশে উপজাতিদের সংগঠনকে বলা হতো ‘গানা’। গানার প্রধান বা ‘রাজা’ নির্ধারনের জন্য সেসময় নির্বাচনের বা ভোটাভুটির আয়োজন করা হতো। সেসময় সাধারণত রাজার ছেলেই রাজা হতো। তবে গানা সদস্যরা রাজা নির্বাচনে চূড়ান্ত মত দিতেন। পরের দিকে সানগাম যুগের (খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতক থেকে ৩য় খ্রিষ্টাব্দ) লোকেরাও তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোট দিতেন বলে প্রমান পাওয়া গেছে। সেসময় ভোট দিতে ব্যালট বাক্সও (সাধারণত পাত্র) ব্যবহারের নজির দেখা যায়। ব্যবহৃত ওই ব্যালট বাক্স দড়ি দিয়ে বেধে সিল করে দেয়া হতো।
তারপর মধ্যযুগে পালা রাজা গোপালা (৭৫০ থেকে ৭৭০খ্রিষ্টাব্দ) নির্বাচিত হন একদল সামন্ত প্রধানদের ভোটে। ওই ধরনের ভোট সমসাময়িক সমাজ ব্যবস্থা ও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। উথিরামেরুর (বর্তমান তামিলনাড়ু) চোলা সামাজ্যে ৯২০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে গ্রাম কমিটি সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি হতো। সেসময় কমিটির সদস্য হতে আগ্রহী প্রার্থীদের নাম পাম গাছেল পাতায় লিখে মাটির একটি পাত্রে রেখে দেয়া হতো। পরে একজন বালক কমিটির সদস্য সংখ্যার সমান পাতা মাটির পাত্র থেকে তুলে নিতো। অনেকটা আজকের দিনে লটারির মতো। আর এইভাবেই নির্বাচিত হতেন গ্রাম কমিটির সদস্য। এই পদ্ধতিতে বলা হতো কিউদাভোলাই পদ্ধতি।
যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রথমবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৭৮৯ সালে। ভোটাররা রাজ্য নির্বাচক (স্টেট ইলেকট্ররাল) ঠিক করতে ভোট দিতেন। সেসময় ভোট দেবার অধিকার ছিল শুধুমাত্র শেতাঙ্গদের। যেমনটা আগেই ধারণা করা হয়েছিল সেইমত ১৭৮৯ সালের ৩০ এপ্রিল জর্জ ওয়াশিংটন নির্বাচিত হয়ে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
ওই সময়ের মত আজও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইলেকট্রোরাল কলেজ পদ্ধতি ব্যবহার করে। কেননা মার্কিনিরা সরাসরি তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারেন না।
সূত্র: হিস্টরি ডট কম, ব্রিটানিকা ডট কম, ট্রেলিগ্রাফ, ও সিএনএন অবলম্বনে আনোয়ার হোসেন
খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে গ্রীক নগরী পলিস (আজকের এথেনস) এ বিশ্বে প্রথমবারের মতো গণতন্ত্রের সূচনা হয়, যা ‘এথেনিয়ান ডেমোক্রেসি’ নামে পরিচিত। পরে গ্রীসের অন্যান্য নগরীতেও এথেনিয়ান মডেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করতে দেখা যায়। তবে সেসবের নথি ভালভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি যেমনটা করা হয়েছে এথেনসের ক্ষেত্রে। এথেনসের ‘ডাইরেক্ট ডেমোক্রেসি’বা ‘সরাসরি গণতন্ত্র’যেখানে অংশগ্রহণকারী নাগরিকরা আইন বা নির্বাহী বিলে সরাসরি ভোট দিতে পারতেন।
যদিও সেসব নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। ভোটাধিকার সংরক্ষিত ছিল ভিনদেশী, দাস ও নারী ব্যতীত অন্যান্য প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের জন্য। এথেনিয়ান গণতন্ত্রে যাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিলো তাদের অন্যতম হলেন, সোলন (৫৯৪ খ্রি.পূ.), ক্লেইসথেনেস (৫০৮ খ্রি.পূ.) এবং ইপহিয়ালটেস (৪৬২ খ্রি.পূ.)।
রোমান সম্রাটরা তাদের অগণতান্ত্রিক ঐহিত্যের জন্য পরিচিত। তবে রোমান রিপাবলিক যুগে রোমানরা প্রথমবার ভোট প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে। ৫০৯ খ্রিষ্টপূর্বে রোমানরা তাদের ‘ইটরুসকান’ শাসক উৎখাতের মাধ্যমে ‘রোমান রিপাবলিক’ যুগের সূচনা করে। তখনকার সময়ের ভোটের গুরুত্ব অবশ্য আধুনিক সময়ের ভোটের মতো ছিল না। তবে আজকের দিনের ভোট প্রক্রিয়ায় রিপাবলিক যুগের প্রভাব লক্ষনীয়। রোমান রিপাবলিক প্রাচীন রোম শাসন করেছে ৫০০ বছর।
এটি ছিল এমন এক ধরনের সরকার যেখানে জনগণ সরকারি কর্মকর্তাদের নির্বাচিত করতে পারতেন। জটিল এই সরকারের সঙ্গে ছিল একটি সংবিধান যেখানে প্রতিটি বিষয়ে বিস্তারিত আইন ছিলো। ভোটে নির্বাচিতদের অন্যতম ছিল সিনেটর। এছাড়া রোমান রিপাবলিকে সরকার পরিচালনায় সাহায্য করার জন্য আরো অনেক নেতা ও গ্রুপ ছিল। নির্বাচিত কর্মকর্তাদের বলা হতো ম্যাজিস্টেট।
শুরুতে মাত্র দুজন কনসাল ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও রিপাবলিকের শেষ দিকে এ সংখ্যা ৪৪ এ পৌঁছায়। নির্বাচনে ভোট দিতে পারতেন শুধুমাত্র রোমান পুরুষরা। আর নারী, দাস এবং যারা রোমে জন্মগ্রহণ করেনি তাদের ভোটাধিকার ছিল না। শুরুতে ভোটাধিকার সীমিত সংখ্যায় হলেও ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন এক সময় রোমান সাম্রাজ্যে ভোটারের সংখ্যা ৯ লক্ষ ১০ হাজারে ছাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
অন্যদিকে ভারতীয় উপমহাদেশেও নির্বাচনের ইতিহাস বেশ পুরনো। বৈদিক (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব) যুগে ভারতীয় মহাদেশে উপজাতিদের সংগঠনকে বলা হতো ‘গানা’। গানার প্রধান বা ‘রাজা’ নির্ধারনের জন্য সেসময় নির্বাচনের বা ভোটাভুটির আয়োজন করা হতো। সেসময় সাধারণত রাজার ছেলেই রাজা হতো। তবে গানা সদস্যরা রাজা নির্বাচনে চূড়ান্ত মত দিতেন। পরের দিকে সানগাম যুগের (খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতক থেকে ৩য় খ্রিষ্টাব্দ) লোকেরাও তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোট দিতেন বলে প্রমান পাওয়া গেছে। সেসময় ভোট দিতে ব্যালট বাক্সও (সাধারণত পাত্র) ব্যবহারের নজির দেখা যায়। ব্যবহৃত ওই ব্যালট বাক্স দড়ি দিয়ে বেধে সিল করে দেয়া হতো।
তারপর মধ্যযুগে পালা রাজা গোপালা (৭৫০ থেকে ৭৭০খ্রিষ্টাব্দ) নির্বাচিত হন একদল সামন্ত প্রধানদের ভোটে। ওই ধরনের ভোট সমসাময়িক সমাজ ব্যবস্থা ও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। উথিরামেরুর (বর্তমান তামিলনাড়ু) চোলা সামাজ্যে ৯২০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে গ্রাম কমিটি সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি হতো। সেসময় কমিটির সদস্য হতে আগ্রহী প্রার্থীদের নাম পাম গাছেল পাতায় লিখে মাটির একটি পাত্রে রেখে দেয়া হতো। পরে একজন বালক কমিটির সদস্য সংখ্যার সমান পাতা মাটির পাত্র থেকে তুলে নিতো। অনেকটা আজকের দিনে লটারির মতো। আর এইভাবেই নির্বাচিত হতেন গ্রাম কমিটির সদস্য। এই পদ্ধতিতে বলা হতো কিউদাভোলাই পদ্ধতি।
যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রথমবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৭৮৯ সালে। ভোটাররা রাজ্য নির্বাচক (স্টেট ইলেকট্ররাল) ঠিক করতে ভোট দিতেন। সেসময় ভোট দেবার অধিকার ছিল শুধুমাত্র শেতাঙ্গদের। যেমনটা আগেই ধারণা করা হয়েছিল সেইমত ১৭৮৯ সালের ৩০ এপ্রিল জর্জ ওয়াশিংটন নির্বাচিত হয়ে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
ওই সময়ের মত আজও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইলেকট্রোরাল কলেজ পদ্ধতি ব্যবহার করে। কেননা মার্কিনিরা সরাসরি তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারেন না।
সূত্র: হিস্টরি ডট কম, ব্রিটানিকা ডট কম, ট্রেলিগ্রাফ, ও সিএনএন অবলম্বনে আনোয়ার হোসেন