Monday, December 10, 2018

প্রাচীনতম নির্বাচনের কথা

নির্বাচনের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রাচীন গ্রীস, প্রাচীন রোমের পর মধ্যযুগেও শাসক ঠিক করার জন্য নির্বাচন পদ্ধতির ব্যবহার করা হতো। রোমান সম্রাট থেকে শুরু করে পোপ পর্যন্ত নির্বাচন বা ভোটাভুটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতেন। বর্তমানে আমরা নির্বাচন বলতে যা বুঝি বা যেভাবে সরকার প্রতিনিধি বা আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হন এই ব্যবস্থার সূচনা হয় ১৭ শতকের প্রাক্কালে। সে সময় প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ধারণার প্রথম বাস্তবায়ন হয় উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে। নির্বাচনের সঙ্গে ভোট প্রদান অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। নির্বাচনের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল ভোটাধিকার। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও দেখা গেছে ভোট প্রদানের বিষয়ে পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রথমদিককার ভোটগুলোতে জমিদার ও শাসক শ্রেণির মানুষদের প্রাধান্য দেখা গেছে। যাই হউক, ১৯২০ সাল নাগাদ পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান না থাকা সব দেশগুলোতে পূর্ণবয়স্ক সব নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। ওই সময় কিছু দেশ নারীদের ভোটাধিকার প্রদানেও এগিয়ে আসতে দেখা যায়। ভোট, ভোটার এবং প্রার্থীদের সমন্বয়ে গড়া প্রাচীনতম কয়েকটি নির্বাচনের ইতিহাস সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জানা যাক।


খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকে গ্রীক নগরী পলিস (আজকের এথেনস) এ বিশ্বে প্রথমবারের মতো গণতন্ত্রের সূচনা হয়, যা ‘এথেনিয়ান ডেমোক্রেসি’ নামে পরিচিত। পরে গ্রীসের অন্যান্য নগরীতেও এথেনিয়ান মডেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করতে দেখা যায়। তবে সেসবের নথি ভালভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি যেমনটা করা হয়েছে এথেনসের ক্ষেত্রে। এথেনসের ‘ডাইরেক্ট ডেমোক্রেসি’বা ‘সরাসরি গণতন্ত্র’যেখানে অংশগ্রহণকারী নাগরিকরা আইন বা নির্বাহী বিলে সরাসরি ভোট দিতে পারতেন।


 যদিও সেসব নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। ভোটাধিকার সংরক্ষিত ছিল ভিনদেশী, দাস ও নারী ব্যতীত অন্যান্য প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের জন্য। এথেনিয়ান গণতন্ত্রে যাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিলো তাদের অন্যতম হলেন, সোলন (৫৯৪ খ্রি.পূ.), ক্লেইসথেনেস (৫০৮ খ্রি.পূ.) এবং  ইপহিয়ালটেস (৪৬২ খ্রি.পূ.)।

রোমান সম্রাটরা তাদের অগণতান্ত্রিক ঐহিত্যের জন্য পরিচিত। তবে রোমান রিপাবলিক যুগে রোমানরা প্রথমবার ভোট প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে। ৫০৯ খ্রিষ্টপূর্বে রোমানরা তাদের ‘ইটরুসকান’ শাসক উৎখাতের মাধ্যমে ‘রোমান রিপাবলিক’ যুগের সূচনা করে। তখনকার সময়ের ভোটের গুরুত্ব অবশ্য আধুনিক সময়ের ভোটের মতো ছিল না। তবে আজকের দিনের ভোট প্রক্রিয়ায় রিপাবলিক যুগের প্রভাব লক্ষনীয়। রোমান রিপাবলিক প্রাচীন রোম শাসন করেছে ৫০০ বছর।

এটি ছিল এমন এক ধরনের সরকার যেখানে জনগণ সরকারি কর্মকর্তাদের নির্বাচিত করতে পারতেন। জটিল এই সরকারের সঙ্গে ছিল একটি সংবিধান যেখানে প্রতিটি বিষয়ে বিস্তারিত আইন ছিলো। ভোটে নির্বাচিতদের অন্যতম ছিল সিনেটর। এছাড়া রোমান রিপাবলিকে সরকার পরিচালনায় সাহায্য করার জন্য আরো অনেক নেতা ও গ্রুপ ছিল। নির্বাচিত কর্মকর্তাদের বলা হতো ম্যাজিস্টেট।

শুরুতে মাত্র দুজন কনসাল ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও রিপাবলিকের শেষ দিকে এ সংখ্যা ৪৪ এ পৌঁছায়। নির্বাচনে ভোট দিতে পারতেন শুধুমাত্র রোমান পুরুষরা। আর নারী, দাস এবং যারা রোমে জন্মগ্রহণ করেনি তাদের ভোটাধিকার ছিল না। শুরুতে ভোটাধিকার সীমিত সংখ্যায় হলেও ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন এক সময় রোমান সাম্রাজ্যে ভোটারের সংখ্যা ৯ লক্ষ ১০ হাজারে ছাঁড়িয়ে গিয়েছিল।      

অন্যদিকে ভারতীয় উপমহাদেশেও নির্বাচনের ইতিহাস বেশ পুরনো। বৈদিক (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব) যুগে ভারতীয় মহাদেশে উপজাতিদের সংগঠনকে বলা হতো ‘গানা’। গানার প্রধান বা ‘রাজা’ নির্ধারনের জন্য সেসময় নির্বাচনের বা ভোটাভুটির আয়োজন করা হতো। সেসময় সাধারণত রাজার ছেলেই রাজা হতো। তবে গানা সদস্যরা রাজা নির্বাচনে চূড়ান্ত মত দিতেন। পরের দিকে সানগাম যুগের (খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতক থেকে ৩য় খ্রিষ্টাব্দ) লোকেরাও তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোট দিতেন বলে প্রমান পাওয়া গেছে। সেসময় ভোট দিতে ব্যালট বাক্সও (সাধারণত পাত্র) ব্যবহারের নজির দেখা যায়। ব্যবহৃত ওই ব্যালট বাক্স দড়ি দিয়ে বেধে সিল করে দেয়া হতো।


তারপর মধ্যযুগে পালা রাজা গোপালা (৭৫০ থেকে ৭৭০খ্রিষ্টাব্দ) নির্বাচিত হন একদল সামন্ত প্রধানদের ভোটে। ওই ধরনের ভোট সমসাময়িক সমাজ ব্যবস্থা ও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। উথিরামেরুর (বর্তমান তামিলনাড়ু) চোলা সামাজ্যে ৯২০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে গ্রাম কমিটি সদস্য নির্বাচনের জন্য ভোটাভুটি হতো। সেসময় কমিটির সদস্য হতে আগ্রহী প্রার্থীদের নাম পাম গাছেল পাতায় লিখে মাটির একটি পাত্রে রেখে দেয়া হতো। পরে একজন বালক কমিটির সদস্য সংখ্যার সমান পাতা মাটির পাত্র থেকে তুলে নিতো। অনেকটা আজকের দিনে লটারির মতো। আর এইভাবেই নির্বাচিত হতেন গ্রাম কমিটির সদস্য। এই পদ্ধতিতে বলা হতো কিউদাভোলাই পদ্ধতি।

যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রথমবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৭৮৯ সালে। ভোটাররা রাজ্য নির্বাচক (স্টেট ইলেকট্ররাল) ঠিক করতে ভোট দিতেন। সেসময় ভোট দেবার অধিকার ছিল শুধুমাত্র শেতাঙ্গদের। যেমনটা আগেই ধারণা করা হয়েছিল সেইমত ১৭৮৯ সালের ৩০ এপ্রিল জর্জ ওয়াশিংটন নির্বাচিত হয়ে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

 ওই সময়ের মত আজও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইলেকট্রোরাল কলেজ পদ্ধতি ব্যবহার করে। কেননা মার্কিনিরা সরাসরি তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারেন না।

সূত্র: হিস্টরি ডট কম, ব্রিটানিকা ডট কম, ট্রেলিগ্রাফ, ও সিএনএন অবলম্বনে আনোয়ার হোসেন

Thursday, December 6, 2018

ভোটের ইতিহাসে বিস্ময়কর সব ফলাফল


দেশে এখন নির্বাচনের হাওয়া বইছে। সে হাওয়ায় দুলছে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, প্রার্থী, ভোটার এমনকি যারা ভোটার নন তারাও। সবার চোখ আসন্ন নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। কারা হবেন নির্বাচিত বা কারা বসবেন ক্ষমতায়। যদিও এই নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা দেখে ইতোমধ্যে কেউ হতাশ, কেউ ক্ষুব্ধ কেউবা বিস্মিত। তবে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনের অনেকগুলোতেই আরো বেশি বিস্মিত হবার মত ফলাফল আসতে দেখা গেছে। ওইসব নির্বাচনের কয়েকটিতে জয়ী হয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করে দুপায়ের মানুষ নয় চারপেয়ে প্রাণী- কুকুর, গাধা, বিড়াল বা ছাগল। খুঁজে দেখা যাক নির্বাচনের সেসব বিস্মিত ফলাফলগুলো।

মেয়র স্টাফ
যুক্তরাষ্ট্রে খুব বেশি মেয়র খুজে পাওয়া যাবে না যাদের গা চুলকে দিয়েছে তাদের ভোটাররা। আবার এমন মেয়রও পাওয়া যাবে না যিনি আদুল গায়ে শহরময় ঘুরে বেড়ান আর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সামনেই কুন্ডলি পাকিয়ে মাঝে মাঝে হালকা ঘুমিয়ে নেন। তবে মেয়র স্টাফ এসব কাজ একদশকেরও বেশি সময় ধরে সাফল্যের সঙ্গেই করেছেন। কেননা জনপ্রিয় এ মেয়র রক্ত-মাংসের কোন মানুষ নন ছিলেন জলজ্যান্ত একটি বিড়াল। নিশ্চিত করেই বলা যায় ১৯৯৭ সালে বিড়াল এবং মনুষ্য উভয় সমাজেই নতুন করে ইতিহাস রচনা করেন স্টাফ। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট শহর টকিটনাতে নির্বাচিত মেয়র স্টাফ ১৫ বছর ধরে মেয়র হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন।


শহরের অধিবাসীরা ১৯৯৭ সালে মানুষ মেয়র প্রার্থীদের ওপর বিতশ্রদ্ধ হয়ে আস্থা রাখেন তখনকার সময়ে বিড়াল শিশু স্টাফের উপর। অনরারি মেয়র নির্বাচিত হন স্টাফ। শহরের ব্যবসায়ীরাও মেয়র স্টাফের উপর খুশি ছিল। কেননা নতুন মেয়র তাদের ব্যবসার ওপর নতুন কোন করারোপ করেননি। স্থানীয় এক রেস্টুরেন্টে অফিস করতেন মেয়র স্টাফ।


সেসময় টকিটনা শহরের অন্যতম পর্যটক আর্কষণে পরিণত হন মেয়র স্টাফ। প্রতিদিন তার সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য ৪০ থেকে ৫০ জন পর্যটক আসতেন। সারাক্ষণ মিউ মিউ করা স্টাফ রেস্টুরেন্টের কাউন্টারে শুয়ে বসে থাকতে পছন্দ করতেন। তবে দুপুরে দর্শণার্থীদের ভিড় স্টাফ একদম পছন্দ করতেন না। কেননা ওই সময় স্টাফ নিয়মকরে হালকা ঘুমিয়ে নিতো। আমরা যেমন দুপুরে খাওয়ার পর ভাতঘুম দিতে পছন্দ করি। স্যোশাল মিডিয়াতেও স্টাফ সমান জনপ্রিয় ছিলো। একসময় ফেসবুকে স্টাফের পেইজের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ছিল ৬ হাজারেরও বেশি। স্টাফ আমৃত্যু মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ২০১৭ সালের ২১ জুলাই ২০ বছর বয়সে স্টাফ মৃত্যুবরণ করেন।
   
কুকুর-ছাগল যখন প্রেসিডেন্ট
নিউজিল্যান্ডের ওয়ানগামমোনা এলাকায় প্রথম বসতি স্থাপিত হয় ১৮৯৫ সালে। এর ২ বছর পর শহরটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তারপর বন্যা ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানীর কারণে এ শহরের বেড়ে উঠা মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।শহরের জনস্ংখ্যা দ্রুতই কমে যেতে থাকে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, জনসংখ্যার অভাবে ১৯৮৮ নাগাদ শহরের একমাত্র স্কুল ও পোস্ট অফিসটি বন্ধ করে দিতে হয়।১৯৮৯ সাল থেকে তারা শহরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা আরম্ভ করে। প্রথমবার ইয়ান কেজেসট্রাপ নামের এক ব্যক্তি ওই পদে নির্বাচিত হন যিনি প্রায় একদশক দায়িত্ব পালন করেন।

শহরের ক্ষুদ আয়তন আর স্বল্পসংখ্যক অধিবাসীর জন্য শহরবাসী হয়তো ওখানে নির্বাচনকে গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেনি।  তাই ১৯৯৯ সালে শহরবাসী বিলি গামবুটকে তাদের শহরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন।নাম শুনে ভুল ধারণা হতে পারে।তবে বিলি ছিলো একটি ছাগবৎস। বলা হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদন্ধীর ব্যালট পেপার খেয়ে ফেলায় খুব সহজেই জয় লাভ করে বিলি।২০০১ সাল অবধি বিলি শহরের প্রেসিডেন্টের পদে ছিলেন।বিলির পরে শহরের প্রেসিডেন্টের পদে বসেন থাই নামের একটি পেডলার কুকুর। তারপর ২০০৫ সালে অবসরে যাবার পর থাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হন র্মুটলে দ্যা টার্টেল।এই নাম দেখে আবারও ভুল হতে পারে। কেননা র্মুটলে কচ্ছপ ছিলেন না, ছিলেন একজন মানুষ প্রেসিডেন্ট।

দ্যা মিলটন মিউল       
যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতীক হচ্ছে গাধা। ১৯৩৮ সালে এই গাধাতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দল ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান এক বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। ওই বছর ওয়াশিংটন রাজ্যের মিলটন শহরে রিপাবলিকান দলের প্রতিনিধি বা প্রিসিনঙ্কট কমিটিম্যান হিসেবে একটি খচ্চর জয় লাভ করে। কিভাবে রিপাবলিকানদের  এই পদে একটি সত্যিকার গাধা জয়লাভ করলো?


আমাদের দেশের বর্তমান রাজনীতিতে দল বা প্রতীক প্রার্থীর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।বলা হয়ে থাকে ভোটারা দল বা প্রতীক দেখে ভোট দেন, প্রার্থী দেখে নয়। ৪০ এর দশকের যুক্তরাষ্ট্রে একই অবস্থা বিরাজ করছিলো। ওই অবস্থার পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এবং সিস্টেমের অসংঙ্গতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার জন্য শহরের মেয়র কিথ সিমনস ‘বসটন কারটিস’ নামের ওই গাধাটিকে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাড় করান।নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অফিসিয়াল কাগজপত্রে স্বাক্ষরের পরিবর্তে গাধার খুড়ের ছাপ ব্যবহার করা হয়।তারপর যা হবার তাই হয়।

কার্যত অন্ধ ভোটাররা কাকে ভোট দিচ্ছেন না জেনেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন বসটন কারটিসকে। পরে ফলাফলে জয়ী বসটন কারটিসকে দেখে সাড়া পড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে।এমনকি পরে এই ঘটনা স্থান করে নেয় রিপলিস বিলিভ ইট অর নটেও।         
  
টাইম, সিএনএন, লিস্টভার্স ডট কম অবলম্বনে আনোয়ার হোসেন

Tuesday, December 4, 2018

বিশ্বের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ফলাফলের নির্বাচন


যেকোন নির্বাচনে সব প্রার্থীই জয় প্রত্যাশা করেন। যদিও জয় পান মাত্র একজনই। তাই পরাজিত প্রার্থীদের কাছে সব সময় নির্বাচনের ফল অপ্রত্যাশিত মনে হতেই পারে। তবে সবাইকে অবাক করা অপ্রত্যাশিত ফলের নির্বাচনও বিশ্ব জুড়ে কম দেখা যায়নি। অপ্রত্যাশিত ফলাফলের ওইসব নির্বাচনের সংখ্যা একেবারে কমও নয়। নিকট অতীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ট ট্রাম্পের বিজয়, নাৎসি দলের নেতা হিটলারের চ্যান্সেলর নির্বাচিত হওয়া বা বৃটেনে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা চার্চিলের পরাজয় তাদের কয়েকটি। খুঁজে দেখা যাক সেই অপ্রত্যাশিত নির্বাচনী ফলাফলের কয়েকটি সম্পর্কে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে পুরো বিশ্বই চমকে উঠে। তার বিজয়ের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গতানুগতিক রাজনৈতিক চিন্তা-ধারায় বড় ধরনের ধাক্কা খায়।

সপ্তাহব্যাপী নির্বাচনী পূর্ভাবাসের সবগুলোতেই হিলারির জয়ের কথা বলা হয়। অন্যদিকে ডজনেরও বেশি নারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনে। অথচ এত কিছুর পরও নির্বাচনে বিজয়ীর জয়মাল্য পড়ে ট্রাম্পের গলায়।

হিটলারের পরাজয় নাকি জয়
১৯৩২ সালের নির্বাচনে জার্মানীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্ধীর একজন ছিলেন পল ভন হিনডেনবার্গ ও অ্যাডলফ হিটলার। নির্বাচনে হিটলার ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে পরাজিত হন।

তাহলে তিনি কিভাবে চ্যান্সেলর হলেন কিভাবে? জার্মান সরকারের তখন ছত্রভঙ্গ অবস্থা। জার্মানিকে বিশ্বের মধ্যে শক্তিশালী এক জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কোন উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।  এমন অবস্থায় হিনডেনবার্গ সরকারের হাত শক্তিশালী করার উদ্দেশে হিটলারকে চ্যান্সেলর পদে নিয়োগ দেন। যা ছিল সবারই জন্যই প্রত্যাশিত। নির্বাচনে পরাজিত হিটলার ক্ষমতার মসনদে বসলেন। তারপর পৃথিবীর ইতিহাস বাক নেয় ভিন্নদিকে। নতুন করে লেখা ওই ইতিহাসে হিটলারকে দেখা হয় বিশ্বের সবচেয়ে সমালোচিত নেতা হিসেবে।

তুমুল জনপ্রিয় উইনস্টন চার্চিলের পরাজয়
বৃটেনের ইতিহাসে উইনস্টন চার্চিলের মত জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী আর দেখা যায়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বিড়াট এক নিয়ামক হয়ে দাড়ায়। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী চার্চিল সবার পছন্দের ব্যক্তিতে পরিণত হন।

 যুদ্ধকালীন সময় তিনি পুরো জাতিকে একাই সাহস যোগান। চার্চিল ভয়ানক ওই যুদ্ধে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিলেও যুদ্ধ পরবর্তী নির্বাচনে মুদ্রার অপর পিঠ দেখে ফেলেন। ১৯৪৫ সালের ওই নির্বাচনে চার্চিল পরাজিত হন ক্লেমেন্ট অ্যাটলির কাছে। চার্চিলের দল বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেন যে, সারা দেশ চার্চিলকে নায়কদের মর্যাদা দিয়ে প্রশংসা করলেও ভোটটি দিয়েছে অ্যাটলিকে।   

বুশ বনাম গোর: আদালতের ঐতিহাসিক রায়
এটিকে বলা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর নির্বাচনগুলোর একটি। ওই নির্বাচনে ফ্লোরিডার ফলের উপর নির্ভর করছিলো কে হতে যাচ্ছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অথচ ফ্লোরিডাতে প্রতিদ্ধন্ধী দুই প্রার্থী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রাথমিকভাবে দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের পার্থক্য ছিল শুণ্য দশমিক ৫ শতাংশ।

 ফ্লোরিডা রাজ্যের আইন অনুযায়ী ভোট পুনঃগণনাতে ৩১৭ ভোটে এগিয়ে ছিল বুশ। গোর আহবান জানালেন ম্যানুয়ালি গণনার। এরই মধ্যে বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ফ্লোরিডার আদালত গোরের পক্ষ নিয়ে ভোট পুনঃগননার রায় দেয়। কিন্তু মার্কিন উচ্চ আদালত সবাইকে হতবাক করে দিয়ে পুনগননার ওই রায় স্থগিত করে দিলে প্রেসিডেন্ট পদে বসতে আর কোন বাধা থাকে না বুশের। বলা হয়ে থাকে ফ্লোরিডাতে আবার নির্বাচন হলেও ওই সময় গোর পরিস্কার ব্যবধানে জয়ী হতেন এবং প্রেসিডেন্ট হতেন। 

অনিবার্য হিলারি পরাজিত হলেন বারাক ওবামার কাছে
২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পূর্ভাবাসে বলা হয় হিলারির জয় অবশ্যম্ভাবী। তাই মনোনয়ন লাভ করে তার জয় লাভ সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেময় হিলারি শুধুমাত্র তুমুল জনপ্রিয় সাবেক প্রেসিডেন্ট ‘বিল ক্লিনটনের স্ত্রী’এ পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন না। তিনি নিজেও ছিলেন ডেমোক্রেট দলের অন্যতম গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব।

তাই ধারণা করা হচ্ছিল, ডেমোক্রেট মনোনয়ন পাবার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন হিলারি। অথচ সবার জন্যই তখন বিড়াট এক বিস্ময় অপেক্ষা করেছিল। সবাইকে হতবাক করে দেন ইলিনোস থেকে আসা থেকে এক অপরিচিত সিনেটর বারাক ওবামা। অসাধারণ বক্তা আর ক্যাম্পেইনার ওবামা হিলারির কাছ শুধু মনোনয়নই ছিনিয়ে নেয়নি সঙ্গে জিতে নেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদটিও।   
     
কেনেডির কাছে পরাজিত হলেন নিক্সন
১৯৬০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কেউ ভাবেননি নিক্সন হেরে যাবেন। দুই মেয়াদে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে থাকা নিক্সনের ছিল শক্তিশালী কমিউনিস্টবিরোধী মনোভাব। সবকিছু মিলে তাকে মনে করা হচ্ছিল স্নায়ুযুদ্ধকালীন যোগ্য নেতা। কেননা তার বিপরীতে লড়ছিলেন অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক যুবক জন এফ কেনেডি। বেশ কয়েকটি বিষয়কে নিক্সনের পরাজয়ের কারণ হিসেবে মনে করা হয়। প্রথমত, ইলিনোইস রাজ্যে কেনেডি সামান্য ব্যবধানে জয় পান।

ইলিনোইস রাজ্যকে ধরা হয় গুরুত্বপূর্ণ সুইং ম্টেট হিসেবে। দ্বিতীয়ত, দুই প্রার্থীর মধ্যে তুলনামূলকভাবে কেনেডি ছিলেন আকর্ষণীয়, ক্যারিশমাটিক চরিত্রের অধিকারী এবং সর্বোপরি যুবা বয়সী। তৃতীয়ত, ওই বছর প্রথমবারের মত প্রার্থীদের বিতর্ক টেলিভিশনে প্রচার শুরু হয়। ওই বিতর্কে সাবলিল বক্তা ও স্টাইলিশ কেনেডিকে ভোটাররা তাৎক্ষনিকভাবে তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে পছন্দ করে নেয়। বলা হয় ওই বিতর্ক টেলিভিশনে প্রচারিত না হলে হয়ত কেনেডি সেবছর সবাইকে বিস্মিত করা ওই বিজয় লাভ করতেন না।


প্রাচীনতম নির্বাচনের কথা

নির্বাচনের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রাচীন গ্রীস, প্রাচীন রোমের পর মধ্যযুগেও শাসক ঠিক করার জন্য নির্বাচন পদ্ধতির ব্যবহার করা হতো। রো...